ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ বিয়ের সাত বছর পরে বড় ভাইয়ের কন্যা সন্তান দেখতে ঢাকার উত্তরার একটি হাসপাতালে ছুটে যান তারেক হোসেন কাউয়ুম (২৭)। মঙ্গলবার মারা যায় সেই নবজাতক। ভাইয়ের মেয়ের লাশ নিয়ে পরিবারের পাঁচজন ও তাঁর শ্যালক রওনা হন ঝালকাঠির উদ্দেশে। মৃত্যুশোক বুকে চেপেও নিজের ২১ দিন আগে জন্ম নেওয়া সন্তানের মুখ দেখার জন্য অপেক্ষা তারেকের। প্রিয় সন্তানের প্রথমবারের মত মুখ দেখা হলো না তাঁর।
বরিশালের উজিরপুর উপজেলার আটিপাড়া গ্রামে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে বুধবার বিকেলে বাস-অ্যাম্বুলেন্স-কাভার্ডভ্যানের ত্রিমুখি সংঘর্ষে তারেকসহ মারা যায় ৬ জন। এক পরিবারের সবার মৃত্যুতে শোকের মাতম চলছে নিহতদের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার বাউকাঠিতে। নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সন্তান জন্মের পাঁচদিন আগে তারেক ঢাকা যায় চাকুরিতে যোগদানের জন্য।
সন্তান জন্মের পর সরাসরি তাঁর মুখ দেখা হয়নি। মোবাইলে ছবি দেখেই খুশি ছিল। প্রিয় সন্তানকে ছুঁয়ে দেখা হলো না তাঁর। স্বামী, ভাইসহ পরিবারের ৬ জনকে হারিয়ে নির্বাক তারেকের স্ত্রী ঝিলিমিল আক্তার মরিয়ম। কোলে ২১ দিন বয়সের সন্তান উম্মে ফাতিমাকে নিয়ে লাশের পাশে আহাজারি করছেন । কান্না যেন থামছে না তাঁর। সন্তানের মুখের দিকে তাকাচ্ছেন, আর চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরছে অঝোরে। এদিকে দুর্ঘটনার খবর শুনে বুধবার সন্ধ্যার পর থেকেই নিহতদের বাড়িতে ভিড় করে স্থানীয়রা। বিভিন্ন স্থান থেকে আত্মীয় স্বজনরাও আসে নিহতের পরিবারের লোকজনকে সান্ত¡না দিতে। তাদের কান্নায় বাতাস ভারি হয়ে যায়। ভোর চারটায় অ্যাম্বুলেন্সযোগে লাশ নিয়ে ঝালকাঠির বাউকাঠি গ্রামের বাড়িতে আসলে হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। স্বজনহারাদের আহাজারি দেখে প্রতিবেশীরাও চোখে পানি ধরে রাখতে পারেনি।
এমন মর্মান্তিক মৃত্যুকে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না প্রতিবেশীরাও। নিহতের স্বজনদের সান্ত¡না দিতে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তারাও। তাদের নানা স্মৃতি নিয়েও করছেন আলোচনা। নিহতরা হলেন, বাউকাঠি গ্রামের তারেক হোসেন কাউয়ুম (২৭), তাঁর বড় ভাই আরিফ হোসেন (৩৫), মা কহিনুর বেগম (৬৫) ছোট বোন শিউলী বেগম (৩০) ও ভাইয়ের শ্যালক নজরুল ইসলাম (২৮)। অ্যাম্বুলেন্সে ছিল আরিফের মৃত চার দিন বয়সের কন্যা সন্তান। বাউকাঠি গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে তারেক ও আরিফ ঢাকা উইনডে ওয়াশিং কোম্পানিতে চাকরি করতেন। তাদের বোন শিউলী বেগম ঢাকা সিএমএইচ এর নার্স ছিলেন। তাঁরা ঢাকাতেই থাকতেন। আরিফের স্ত্রী তামান্না আক্তার তিন্নি (২৭) সন্তান প্রসবের পর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনায় সকাল থেকে বাড়ির পাশের একটি এতিমখানায় চলছে কোরআন খতম।
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় বাড়ির পাশের মাদ্রাসা মাঠে নিহতদের মধ্যে ৫ জনের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। পরে পারিবারিক কবর স্থানে তাদের লাশ দাফন করা হয়। নিহতদের মধ্যে শিউলী আক্তারের লাশ ঢাকা সিএমএইচ এ পাঠানো হয়েছে। সেখানে ময়না তদন্ত শেষে সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে গ্রামের বাড়িতে লাশ দাফন করা হবে।
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply